সক্রিয় জীবনযাপন এবং দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ঝুঁকি

পায়খানা ক্লিয়ার করার ট্যাবলেট এর নামআজকের আধুনিক জীবনে আমরা যে জীবনযাপন করি, তা অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। বিশেষ করে দীর্ঘ সময় ধরে বসে কাজ করার প্রবণতা আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলে।কাজের চাপে দিনের একটি বড় অংশ আমরা ডেস্কে কাটাই, যা শরীরের জন্য বিভিন্ন ঝুঁকি তৈরি করে।
হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, পিঠ ও ঘাড়ের ব্যথা, এমনকি মানসিক চাপের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তবে, সক্রিয় জীবনযাপন এবং দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ঝুঁকি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব যদি আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কিছু সহজ কৌশল অবলম্বন করি। এই পোস্টে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো কিভাবে সক্রিয় জীবনযাপন বজায় রাখা যায় এবং দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ফলে কী ধরনের ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।

পেজ সূচিপত্রঃ সক্রিয় জীবনযাপন এবং দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ঝুঁকি

ভূমিকা

দীর্ঘ সময় বসে থাকার ফলে আমাদের শরীরের পেশি দুর্বল হয়ে যায় এবং মেটাবলিজম হ্রাস পায়। ফলে, শরীরে অতিরিক্ত ওজন, পিঠের ব্যথা, এবং হৃদযন্ত্রের সমস্যা দেখা দেয়। শুধু তাই নয়, মানসিকভাবে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি, এবং বিষণ্নতা ও উদ্বেগের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ধরনের ঝুঁকি কমানোর জন্য সক্রিয় জীবনযাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত শারীরিক চর্চা, যেমন হাঁটাহাঁটি, ব্যায়াম, এবং কাজের মাঝে মাঝে বিরতি নেওয়া আমাদের শরীর ও মনকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। চলুন এবার আমরা "সক্রিয় জীবনযাপন এবং দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ঝুঁকি" নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা শুরু করি।

দীর্ঘ সময় বসে থাকার ঝুঁকি

  • হৃদরোগের ঝুঁকি: দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ঝুঁকি নিয়ে সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হল হৃদরোগের ঝুঁকি। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার ফলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন ধীর হয়ে যায়, এবং এর ফলে হৃদপিণ্ডে পর্যাপ্ত রক্ত প্রবাহিত হয় না। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টার বেশি বসে থাকেন, তাদের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বেশি। শারীরিক সক্রিয়তা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। কাজের ফাঁকে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করা বা স্ট্রেচিং করলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়, যা হৃদপিণ্ডের জন্য উপকারী। দীর্ঘ সময় বসে থাকার ফলে উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রাও বৃদ্ধি পায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে তোলে। তাই সক্রিয় জীবনযাপন এবং দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ঝুঁকি এড়াতে আমাদের উচিত, প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট শারীরিক ব্যয়াম করা।
  • ডায়াবেটিসের ঝুঁকি: সক্রিয় জীবনযাপন না করার ফলে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বাড়ে। দীর্ঘ সময় বসে থাকার কারণে শরীরে ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায় এবং এর ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বেশি সময় বসে থাকেন, তাদের মধ্যে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি সাধারণ মানুষের তুলনায় প্রায় ৯১% বেশি। সক্রিয় জীবনযাপন এবং দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ঝুঁকি কমাতে আমাদের উচিত, প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে সুষম খাবার অন্তর্ভুক্ত করা এবং নিয়মিত শারীরিক চর্চা করা। শারীরিক চর্চা শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। তাই যারা দীর্ঘ সময় ধরে বসে কাজ করেন, তাদের উচিত দিনের বিভিন্ন সময়ে একটু হাঁটাচলা করা এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা।
  • ওজন বৃদ্ধি এবং স্থূলতা: দীর্ঘ সময় বসে থাকার ফলে ওজন বৃদ্ধি এবং স্থূলতা একটা সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শরীরের পেশিগুলি যখন নিষ্ক্রিয় থাকে, তখন আমাদের মেটাবলিজম ধীর হয়ে যায়, ফলে অতিরিক্ত ক্যালোরি বার্ন হয় না এবং শরীরে চর্বি জমতে থাকে। এর ফলে ধীরে ধীরে ওজন বাড়তে থাকে এবং স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ে। যারা দীর্ঘ সময় ধরে অফিসে বসে কাজ করেন বা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকেন, তাদের মধ্যে স্থূলতার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। সক্রিয় জীবনযাপন এবং দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ঝুঁকি এড়াতে আমাদের উচিত, দৈনন্দিন জীবনে শারীরিক চর্চা বাড়ানো। কাজের ফাঁকে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করা, সিঁড়ি ব্যবহার করা, বা গাড়ির পরিবর্তে সাইকেল চালিয়ে যাতায়াত করা আমাদের শরীরকে সক্রিয় রাখতে সহায়ক হবে। এছাড়াও, নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরে ক্যালোরি বার্নের হার বৃদ্ধি পায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • পিঠ ও ঘাড়ের ব্যথা: সক্রিয় জীবনযাপন না করার আরেকটি বড় সমস্যা হল পিঠ ও ঘাড়ের ব্যথা। যারা দীর্ঘ সময় ধরে ডেস্কে বসে কাজ করেন, তারা প্রায়ই পিঠ এবং ঘাড়ের ব্যথায় ভোগেন। বসে থাকার সময় পিঠের পেশি দুর্বল হয়ে যায় এবং মেরুদণ্ডের উপর চাপ পড়ে। এর ফলে পিঠে ব্যথা এবং অস্বস্তি দেখা দেয়। একইভাবে, যারা ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের সামনে কাজ করেন, তাদের ঘাড়ে অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং ঘাড়ের ব্যথা দেখা দিতে পারে। সক্রিয় জীবনযাপন এবং দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ঝুঁকি কমানোর জন্য আমাদের সঠিক ভঙ্গিমায় বসা জরুরি। কাজের সময় সঠিক উচ্চতার চেয়ার এবং ডেস্ক ব্যবহার করা উচিত, যাতে পিঠ এবং ঘাড়ে চাপ কম পড়ে। এছাড়াও, কাজের মাঝে মাঝে উঠে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করা এবং স্ট্রেচিং করা পিঠ ও ঘাড়ের ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে।

আরো পড়ুনঃ অ্যাপল সিডার ভিনেগারের উপকারিতা - কীভাবে ও কতটুকু খাবেন

  • হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস: দীর্ঘ সময় বসে থাকার ফলে হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। শারীরিক সক্রিয়তা আমাদের হাড়কে মজবুত রাখে এবং হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময় বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে এবং অস্টিওপরোসিসের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ে। সক্রিয় জীবনযাপন এবং দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ঝুঁকি কমানোর জন্য নিয়মিত শারীরিক চর্চা করা জরুরি।
  • মনঃসংযোগ কমে যাওয়া এবং ক্লান্তি: সক্রিয় জীবনযাপন না করার ফলে মনঃসংযোগ কমে যেতে পারে এবং শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারে। দীর্ঘ সময় বসে থাকার ফলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন ধীর হয়ে যায়, যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এর ফলে আমাদের মনঃসংযোগের ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং কাজে ফোকাস করতে সমস্যা হয়। দীর্ঘ সময় বসে থাকার ফলে শরীরের পেশিগুলো শক্তিহীন হয়ে পড়ে, যার ফলে ক্লান্তি এবং দুর্বলতা দেখা দেয়।
  • মানসিক চাপ ও বিষণ্নতা: সক্রিয় জীবনযাপন এবং দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ঝুঁকি মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলে। শারীরিক সক্রিয়তা না থাকলে মানসিক চাপ, উদ্বেগ, এবং বিষণ্নতার ঝুঁকি বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা শারীরিকভাবে সক্রিয় নয়, তারা বেশি মানসিক চাপ অনুভব করেন এবং তাদের মধ্যে বিষণ্নতার ঝুঁকিও বেশি থাকে। শারীরিক ক্রিয়াকলাপ আমাদের মস্তিষ্কে এন্ডোরফিন নিঃসরণ বাড়ায়, যা আমাদের মনকে সতেজ রাখে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

সক্রিয় জীবন যাপনের গুরুত্ব

সক্রিয় জীবনযাপন এবং দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ঝুঁকি কাটিয়ে উঠতে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শারীরিক সক্রিয়তা বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সক্রিয় জীবনযাপনের ফলে আমাদের শরীর এবং মন উভয়ই সুস্থ থাকে। শারীরিক সক্রিয়তা শুধুমাত্র আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করে না, বরং মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • শরীরের মেটাবলিজম উন্নত করা: সক্রিয় জীবনযাপন আমাদের শরীরের মেটাবলিজমকে উন্নত করতে সাহায্য করে। শারীরিক চর্চার ফলে আমাদের শরীরের কোষগুলো সক্রিয় থাকে এবং ক্যালোরি বার্নের হার বাড়ে। এর ফলে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমতে পারে না এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ানো: নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপ হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। শারীরিক চর্চার ফলে রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয় এবং হৃদপিণ্ডের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সক্রিয় জীবনযাপন এবং দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ঝুঁকি কমাতে হলে আমাদের হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ানো জরুরি।

আরো পড়ুনঃ পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে

  • মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করা: সক্রিয় জীবনযাপন আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। শারীরিক চর্চা আমাদের মস্তিষ্কে এন্ডোরফিন নামক হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়, যা আমাদের মানসিক চাপ কমাতে এবং মনের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। যারা নিয়মিত শারীরিক চর্চা অংশগ্রহণ করেন, তারা তুলনামূলকভাবে বেশি সুখী এবং কম বিষণ্নতায় ভোগেন। সক্রিয় জীবনযাপন এবং দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ঝুঁকি কমানোর জন্য শারীরিক চর্চা অপরিহার্য। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি, যোগব্যায়াম বা ব্যায়াম করা উচিত।
  • শরীরের নমনীয়তা বৃদ্ধি করা: দীর্ঘ সময় বসে থাকার ফলে আমাদের পেশিগুলো শক্ত হয়ে যায় এবং শরীরের নমনীয়তা হ্রাস পায়। নিয়মিত শারীরিক চর্চা আমাদের শরীরকে নমনীয় রাখতে সাহায্য করে। সক্রিয় জীবনযাপন আমাদের পেশির কর্মক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সচল রাখে। শারীরিক চর্চার ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে সমন্বয় ঘটে এবং শরীরের স্থবিরতা দূর হয়। ফলে পিঠের ব্যথা, ঘাড়ের ব্যথা এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যা কমে যায়। সক্রিয় জীবনযাপন এবং দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ঝুঁকি থেকে মুক্তি পেতে আমাদের নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, যা শরীরের নমনীয়তা বৃদ্ধি করে এবং শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখে।

সক্রিয় জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তোলার কৌশল

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শারীরিক সক্রিয়তা বাড়ানোর জন্য কিছু সহজ কৌশল অনুসরণ করা যেতে পারে। সক্রিয় জীবনযাপন এবং দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ঝুঁকি এড়ানোর জন্য কিছু কৌশল উল্লেখ করা হলো:
  • প্রতিদিন সকালের ব্যায়াম: প্রতিদিন সকালে ১৫-২০ মিনিটের ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। সকালে ব্যায়াম করলে শরীরের শক্তি বাড়ে এবং মন সতেজ থাকে। এটা আপনার সারাদিনের কর্মক্ষমতাকে বাড়িয়ে তুলবে এবং শরীরকে সক্রিয় রাখবে। সকালের হালকা ব্যায়াম যেমন হাঁটাহাঁটি, যোগব্যায়াম বা স্ট্রেচিং আপনার শরীরকে সজীব রাখবে এবং দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ঝুঁকি কমাবে।
  • খাবারের পর হাঁটাহাঁটি করা: প্রতিবার খাবার খাওয়ার পর অন্তত ১০-১৫ মিনিট হাঁটাহাঁটি করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এটি আপনার হজম ক্ষমতা বাড়াবে এবং শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরি বার্ন করতে সাহায্য করবে। দীর্ঘ সময় বসে থাকার ফলে যে ঝুঁকি তৈরি হয়, তা কমাতে খাবারের পর কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করা অত্যন্ত কার্যকর।
  • বিরতি নেওয়া এবং স্ট্রেচিং: দীর্ঘ সময় বসে কাজ করলে প্রতি ৩০-৪৫ মিনিট পরপর ছোট বিরতি নিন এবং কিছু স্ট্রেচিং করুন। এটা শরীরের পেশিকে সক্রিয় রাখবে এবং পিঠ ও ঘাড়ের ব্যথার ঝুঁকি কমাবে। সক্রিয় জীবনযাপন এবং দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ঝুঁকি কমানোর জন্য বিরতি নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। 

আরো পড়ুনঃ A দিয়ে ছেলেদের নামের তালিকা

  • সিঁড়ি ব্যবহার করা: যতটা সম্ভব লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। সিঁড়ি ব্যবহার করলে শরীরের পেশি শক্তিশালী হয় এবং ক্যালোরি বার্নের হার বাড়ে। এটা শারীরিক সক্রিয়তা বাড়ানোর সহজ একটা উপায়, যা আপনাকে দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ঝুঁকি থেকে রক্ষা করবে।
  • সাপ্তাহিক আউটডোর অ্যাকটিভিটি: সক্রিয় জীবনযাপন বজায় রাখতে সপ্তাহের ছুটির দিনে আউটডোর কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করুন। খেলাধুলা, হাঁটা, সাইকেল চালানো, অথবা পার্কে সময় কাটানো আপনার শরীরকে সক্রিয় রাখবে। এছাড়া এটা মানসিক চাপ কমাতে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতেও সাহায্য করবে। আউটডোর অ্যাকটিভিটি দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ঝুঁকি কমাতে একটি কার্যকরী পন্থা।
  • স্ট্যান্ডিং ডেস্ক ব্যবহার করা: যারা অফিসে দীর্ঘ সময় বসে কাজ করেন, তারা স্ট্যান্ডিং ডেস্ক ব্যবহার করতে পারেন। স্ট্যান্ডিং ডেস্ক আপনাকে বসে থাকার পরিবর্তে দাঁড়িয়ে কাজ করতে সাহায্য করে, যা শারীরিক চর্চা বাড়ায় এবং শরীরকে সতেজ রাখে। এর ফলে দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ঝুঁকি হ্রাস পায়।

কীভাবে সক্রিয় জীবন যাপন শুরু করবেন

সক্রিয় জীবনযাপন শুরু করার জন্য কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। নিচে কিছু সহজ ও কার্যকরী পন্থা উল্লেখ করা হলো, যা আপনার শারীরিক সক্রিয়তা বাড়াতে সাহায্য করবে:
  • সকালে ব্যায়াম করা: সক্রিয় জীবনযাপন শুরু করার জন্য দিনের প্রথমভাগেই কিছু শারীরিক চর্চা শুরু করা যেতে পারে। প্রতিদিন সকালে কিছুক্ষণ ব্যায়াম করলে শরীর সক্রিয় হয় এবং পুরো দিনটি ভালোভাবে কাটানো যায়। সকালে ব্যায়াম করলে মন সতেজ থাকে এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করা: প্রথমে ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিদিন ৫-১০ মিনিট হাঁটাহাঁটি শুরু করুন। পরে ধীরে ধীরে সময় বাড়ান এবং শারীরিক চর্চার মাত্রা বৃদ্ধি করুন। এতে করে আপনার শরীর শারীরিক ক্রিয়াকলাপের সাথে মানিয়ে নিতে পারবে এবং আপনি সক্রিয় জীবনযাপন করতে পারবেন।
  • বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের সাথে ব্যায়াম করা: সক্রিয় জীবনযাপন শুরু করতে বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের সাথে ব্যায়াম করতে পারেন। এতে করে আপনি আরও বেশি উৎসাহিত হবেন এবং ব্যায়াম করার আগ্রহ বাড়বে। সক্রিয় জীবনযাপন এবং দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ঝুঁকি কমাতে একসাথে ব্যায়াম করা একটি কার্যকরী পন্থা।
  • ফিটনেস ট্র্যাকার ব্যবহার করা: আপনার প্রতিদিনের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ পর্যবেক্ষণ করার জন্য ফিটনেস ট্র্যাকার ব্যবহার করতে পারেন। ফিটনেস ট্র্যাকার আপনাকে প্রতিদিন কতটা হাঁটছেন, কত ক্যালোরি বার্ন করছেন, কতক্ষণ সক্রিয় আছেন তা জানাতে সাহায্য করবে। এর মাধ্যমে আপনি নিজের অগ্রগতি ট্র্যাক করতে পারবেন এবং সক্রিয় জীবনযাপন করতে পারবেন।
  • ছুটির দিনে শারীরিক চর্চায় অংশগ্রহণ করা: সপ্তাহের ছুটির দিনে শারীরিক চর্চা অংশগ্রহণ করুন। এটা আপনার শরীরকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করবে এবং দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ফলে যে ঝুঁকি তৈরি হয়, তা কমাবে। শারীরিক চর্চা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও সহায়ক হবে।

উপসংহার

বর্তমান জীবনের ব্যস্ততা এবং প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে আমরা প্রায়ই দীর্ঘ সময় ধরে বসে কাজ করতে বাধ্য হই। এটা আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। দীর্ঘ সময় বসে থাকার ফলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ওজন বৃদ্ধি, পিঠ ও ঘাড়ের ব্যথা এবং মানসিক চাপের মতো নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে সক্রিয় জীবনযাপন এবং দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ঝুঁকি কমানোর জন্য আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শারীরিক চর্চার গুরুত্ব অপরিসীম। নিয়মিত ব্যায়াম, হাঁটাহাঁটি, এবং সঠিক ভঙ্গিমায় বসা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

সক্রিয় জীবনযাপন এবং দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ঝুঁকি থেকে মুক্তি পেতে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শারীরিক চর্চাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কাজের মাঝে মাঝে বিরতি নিয়ে একটু হাঁটাহাঁটি করা, সঠিক ভঙ্গিমায় বসা এবং সপ্তাহান্তে আউটডোর কার্যকলাপে অংশগ্রহণ আমাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে সাহায্য করবে। আমরা সক্রিয় জীবনযাপন বজায় রেখে দীর্ঘমেয়াদী সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারি এবং শরীরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারি।
 
সক্রিয় জীবনযাপন এবং দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থেকে আমরা একটা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন গড়ে তুলতে পারি, যা আমাদের জীবনের মান উন্নত করবে এবং আমাদের শরীর ও মনকে সুস্থ রাখবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url