যুক্তফ্রন্ট কখন গঠিত হয় - যুক্তফ্রন্ট কত সালে গঠিত হয়
যুক্তফ্রন্ট কখন গঠিত হয় এই প্রশ্নটি প্রায়ই বাংলাদেশের যে কোন সাধারণ
পরীক্ষায় করা হয়ে থাকে। আপনি যদি যুক্তফ্রন্ট কখন গঠিত হয় তা না জেনে
থাকেন তবে এই পোস্টটি পড়ে নিতে পারেন। আজকের এই পোস্টে আমরা যুক্তফ্রন্ট কত সালে
গঠিত হয় সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরব। অতএব পোস্টটি পড়ে নিন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে যুক্তফ্রন্ট গঠন ছিল এক ঐতিহাসিক ঘটনা। যুক্তফ্রন্ট
গঠিত হওয়ার ফলে পূর্ব বাংলার মানুষ স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আরও এক
ধাপ এগিয়ে যায়। যুক্তফ্রন্ট সমস্ত বাঙ্গালীদেরকে তাদের প্রাপ্য অধিকারের
ব্যাপারে সচেতন করে তুলেছিল। আজকের এই পোস্টটি থেকে আপনারা যুক্তফ্রন্ট কখন
গঠিত হয় সেটি জেনে নেওয়ার পাশাপাশি যুক্তফ্রন্ট সরকারের গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা
পাবেন। অতএব মনোযোগ সহকারে পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ে ফেলুন।
পোস্ট সূচিপত্র - যুক্তফ্রন্ট কখন গঠিত হয় জানুন
যুক্তফ্রন্ট কত সালে গঠিত হয়
মুসলিম লীগের শোষণ বঞ্চনা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে তীব্র গণ আন্দোলনের ফলস্বরূপ
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো মিলিত হয়ে এক প্লাটফর্মে দাঁড়ায়। আর সেটি হলো
যুক্তফ্রন্ট। ১৯৫৩ সালের ১৪ই নভেম্বর যুক্তফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা
হলেও, ৪ ডিসেম্বর শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মাওলানা
আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়।
এরপর তারা বাঙালির মুক্তির জন্য ২১ দফা ইশতেহার প্রণয়ন করে। সুতরাং, যুক্তফ্রন্ট
কবে গঠিত হয় তা আপনারা জেনে ফেললেন। যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার পূর্বে
বাঙালি স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে একুশ দফা দাবি প্রণয়ন করে। সেই দাবির উপর ভিত্তি
করেই তারা নির্বাচনে জয়লাভ করতে সমর্থ হয়। এটা ছিল আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামের
প্রথম কোন বিজয়। যুক্তফ্রন্ট কখন গঠিত হয় তা জেনে ফেললেন।
যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা ইশতেহার
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, যুক্তফ্রন্ট কখন গঠিত হয় তা আপনারা জেনেছেন।
যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠিত হওয়ার পর তারা পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন
প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ২১ দফার একটি বিশাল ইস্তেহার প্রণয়ন করে। চলুন সেই ২১
দফা এবার জেনে নিই।
আরও পড়ুন: প্রতিদিন দই খেলে কি হয়
- বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে সর্বত্র স্বীকৃতি দিতে হবে।
- বিনা ক্ষতিপূরণে সব ধরনের জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ করতে হবে।
- মানুষের মাঝে সমবায় কৃষি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
- পাট ব্যবসাকে পূর্ণাঙ্গভাবে জাতীয়করণ করতে হবে।
- অবৈতনিকভাবে সকলের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা।
- জনগণের স্বার্থ বিরোধী জন নিরাপত্তা আইন বাতিল করা।
- বাংলা ভাষা গবেষণার জন্য বাংলা একাডেমী (বর্ধমান হাউস) প্রতিষ্ঠা করতে হবে ।
- পরিষদের কোন সদস্যের যদি সদস্য পদ শূন্য হয় ৩ মাসের মধ্যে উপনির্বাচন করতে হবে।
- আইন পরিষদের মেয়াদ কোন অজুহাতেই বৃদ্ধি করা যাবে না।
- সব ধরনের স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স গ্রহণ করা।
- পূর্ব পাকিস্তানে বৃহৎ পরিসরে লবণ শিল্প প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
- কারিগর ও কর্মচারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
- শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ পৃথক করতে হবে।
- বাংলা ভাষা শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার নির্মাণ করতে হবে।
- একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবসের মর্যাদা দিতে হবে।
- লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানে পুরোপুরিভাবে স্বায়ত্তশাসন কায়েম করতে হবে।
- শাসন ব্যয় হ্রাস করতে হবে ও মন্ত্রীদের বেতন ১ হাজার টাকার অধিক হওয়া যাবেনা।
- বন্যা ও দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে খাল খনন করতে হবে।
- পূর্ব পাকিস্তানে যথেষ্ট শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে হবে।
- ব্যবস্থার আমল পরিবর্তন ঘটাতে হবে।
- ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। যুক্তফ্রন্ট কখন গঠিত হয় এটি জানার জন্য পোষ্টের প্রথম অংশ পুনরায় পড়ুন।
যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের ফলাফল
১৯৫৪ সালের নির্বাচনের ফলাফলে মোট ৩০৯ টি আসনের বিপরীতে ২০৬টি আসনে জয়
পেয়েছিল সেসময়ের তুমুল জনপ্রিয় জোট যুক্তফ্রন্ট। মাত্র ১০ টি আসনে জয়লাভ
করেছিল মুসলিম লীগ। বাকি আসনগুলোতে অন্যান্য রাজনৈতিক দল জয়লাভ করেছিল।
পরবর্তীতে বাঙালি স্বাধিকার আন্দোলন কে আরো জোরদার করার ক্ষেত্রে যুক্তফ্রন্ট
নির্বাচনের ফলাফল বাঙ্গালীদের আলাদা একটি অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। যুক্তফ্রন্ট কখন
গঠিত হয় এই তথ্যটি জেনে নেওয়ার জন্য পোস্টটি শুরু থেকে পড়ে নিন।
যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের গুরুত্ব
১৯৫৪ সালে প্রত্যক্ষ ভোটে মুসলিম লীগের সজনীয় পরাজয়ের পর তারা আর কখনো
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে পারেনি। ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের পরে যুক্তফ্রন্ট
সরকারের ক্ষমতায় আশা ছিল বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনের প্রথম বিজয়। তাই
নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম।
আরও পড়ুন: পিরিয়ড মিস হওয়ার কারণ
মুসলিম লীগের পতনের মাধ্যমে যুক্তফ্রন্ট যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে তখন বাঙালির
দীর্ঘদিনের একটি শোষণ বঞ্চনার অবসান ঘটে। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্টের
ক্ষমতা গ্রহণ ছিল এক ঐতিহাসিক ঘটনা। যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করার মাধ্যমে
বাংলা যেমন রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় তেমনি পরবর্তী আন্দোলন সংগ্রামে
প্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়ায়।
শেষ কথা
প্রিয় বন্ধুরা আপনারা যদি পোস্টটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তবে
যুক্তফ্রন্ট কখন গঠিত হয় এ তথ্যটি জেনে ফেলেছেন। সেইসাথে যুক্তফ্রন্ট গঠনের ২১
দফা ইশতেহার এবং যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করার গুরুত্ব সম্পর্কেও আপনারা
বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। যুক্তফ্রন্ট কখন গঠিত হয় এই তথ্যটি যদি অন্যদের
জানাতে চান তবে এই পোস্টটি তাদের সাথে শেয়ার করে দিন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক
ইতিহাস ও সংগ্রাম বিষয়ে বিভিন্ন পোস্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটে নজর রাখুন।
@23891
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url